৪০ দিন আগে ইসরায়েলি হামলায় স্ত্রী-সন্তান হারিয়েছিলেন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার আরবি বিভাগের গাজা ব্যুরো প্রধান ওয়ায়েল দাহদুহ। এবার ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়ে তিনি নিজেই গুরুতর আহত হয়েছেন। এ হামলায় নিহত হয়েছেন তার সহকর্মী সামির আবু দাকা। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর আল জাজিরা।
জানা গেছে, শুক্রবার ক্যামেরাম্যান আবু দাকাকে নিয়ে খান ইউনিসে জাতিসংঘের ফারহান স্কুল থেকে ইসরায়েলি হামলার সংবাদ প্রচার করছিলেন দাহদুহ। সে সময় ইসরায়েলি হামলার মুখে পড়েন তারা। হামলায় ক্যামেরাম্যান আবু দাকা গুরুতর আহত হয়ে ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বোমা হামলা অব্যাহত থাকায় ঘটনার পরপরই তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আবু দাকার মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের শ্রাপনাল আঘাত হানে ওয়ায়েল আল-দাহদুরের ডান হাতে। এ অবস্থাতেই দাহদুহ কোনো মতে কাছাকাছি নাসের হাসপাতালে পৌঁছাতে সক্ষম হন। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
গত ২৫ অক্টোবর গাজার দক্ষিণাঞ্চলের নুসিরাত শরণার্থী ক্যাম্পে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ওয়ায়েল আল-দাহদুরের স্ত্রী, দুই সন্তান ও তার নাতনী। তবে তিনি বাইরে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন। এবার দায়িত্ব পালনরত অবস্থাতেই ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আহত হলেন তিনি।
এদিকে সামের আবু দাকার নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট (আইএফজে)। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি গাজায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রদানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে।
যুদ্ধের শুরু থেকেই চরম ঝুঁকি নিয়েও গাজার সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরছিলেন ওয়ায়েল আল-দাহদুহ। পরিবার নিয়ে তিনি বাস করতেন গাজার উত্তরাঞ্চলে। তবে ইসরায়েলি বাহিনী সেখান থেকে সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলে তিনি নিজ পরিবারের সদস্যদের দক্ষিণাঞ্চলের নুসিরাত ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেই ইসরায়েলিদের বর্বর ও নৃশংস হামলায় পরিবারকে হারান তিনি। তবে তাতেও তার সংবাদ প্রচার থেমে থাকেনি। বরং পরিবারের সদস্যদের দাফন করেই তিনি ছুটেছিলেন যুদ্ধের খবর সংগ্রহে।
গত ৭ অক্টোবর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আহত সংবাদকর্মীর সংখ্যা কয়েক শত ছাড়িয়ে গেছে। সংবাদ সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলি বাহিনী ইচ্ছে করেই সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। গাজাসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে চালানো নিজেদের নৃশংস হামলার কথা বিশ্ববাসীর নজরে যেন না পড়ে, সে জন্যই ইসরায়েলি বাহিনী এমন আচরণ করছে।