ঢাকা ১১:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এই শীতে ভ্রমণ হোক সোনার চরে

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৭:১০:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ২২৩ বার পড়া হয়েছে
বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সোনার চর। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দক্ষিণ সীমানার এ দ্বীপটিতে রয়েছে বিস্তৃত সবুজ বনভূমি, প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত। আছে লাল কাঁকড়া ও বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি। নগরের কর্মচাঞ্চল্ল থেকে বহুদূরে এই সৈকতের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য এখনো অনেকের কাছে অজানা।
সুন্দরবনের মতই জোয়ার ভাটার খেলা চলে সোনার চরে। এখানে সৈকতের বালু খুবই স্বচ্ছ। রোদের আলোয় তা ঝিকঝিক করে বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে সোনার চর। চরের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এততাই নির্মল এবং সবুজ যে সুন্দরবনের থেকেও সুন্দর না বলে উপায় নেই।
বিশ হাজার হেক্টর সবুজে ঘেরা এই সংরক্ষিত বনে আছে বন্য মহিষ, হরিণ, শুকর, বানর এবং পাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এখানকার বিশাল বনভুমির মধ্যে ছড়িয়ে আছে দেড় শতাধিক ছোটবড় খাল। ছোট নৌকা বা ইঞ্জিন চালিত ট্রলার নিয়ে এসব খালে ভেসে ভেসে উপভোগ করতে পারবেন বিচিত্র সব পশুপাখির বিচরণ। বনাঞ্চলের কাছাকাছি গেলে হয়তো সহজেই চোখে পড়বে বুনো মহিষ।
ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা হয়ে যেতে পারে হরিণের পালের সঙ্গে।
মহিষ
বনাঞ্চলের কাছাকাছি গেলে চোখে পড়বে বুনো মহিষ। ছবি : লেখক

সোনার চরের মূল সৌন্দর্য এখানকার ঝাউবন। এ ছাড়া, সৈকতের যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন। শীতে যদি সোনার চরে বেড়াতে যান তবে হাজারো পাখির বিচরণ ও কলরবে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।

চরটিতে ক্যাম্পিংও করা যায়; তবে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। সোনার চর ভ্রমণ সেন্ট মার্টিনের মতই রোমাঞ্চকর ও আনন্দময়। পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে লঞ্চে করে চর কাজল, রাঙ্গাবালী এবং চর মন্তাজ হয়ে সোনার চর যাওয়ার পুরোটা পথই অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর। যাত্রাপথে চোখে পড়বে সবুজ ম্যানগ্রোভ বনভূমি, বিশাল মহিষের পাল, স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য এবং চর অঞ্চলের মানুষের কর্ম চঞ্চলতা।

ঘাট
ঘাটে নৌযানের অপেক্ষায় স্থানীয়রা। ছবি : লেখক 

২০১১ সালে সোনার চর পশুপাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বনের মধ্যে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে গেছে পাকা রাস্তা। মূলত পর্যটকদের ভ্রমণের সুবিধার জন্য এটি করা হয়েছে। বন বিভাগের উদ্যোগে বাঘ এবং হরিণের অভয়াশ্রম করা হয়েছে সোনার চরে। এ ছাড়া একটা কুমির প্রজনন কেন্দ্রও গড়ে উঠছে।

কীভাবে যাবেন  
সদরঘাট থেকে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর লঞ্চে উঠে চরকাজল এ নামার পর ছোট লঞ্চে চর মন্তাজ যেতে হবে। এরপর ট্রলার ঠিক করে সোনার চর যাবেন। এ ছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি গলাচিপার লঞ্চে উঠে গলাচিপা চলে যান। গলাচিপা লঞ্চঘাট থেকে স্পিডবোটে সোনার চরে যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘন্টা। গলাচিপা থেকে সোনার চরে রিজার্ভ ট্রলারে একদিনে যাওয়া-আসার খরচ ২ হাজার ৫০০-৩০০০ টাকা।

লঞ্চ
বনাঞ্চলের ভেতরের খালে নৌকায় ভ্রমণ। ছবি : লেখক

গলাচিপা থেকে চর মন্তাজ পর্যন্ত প্রতিদিন লঞ্চ যাতায়াত করে। সকাল ১০টা এবং বেলা ২টায় ছেড়ে যায়। আবার কুয়াকাটা থেকেও সোনার চরে যাওয়া যেতে পারে। যেতে হবে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে। ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে সময় লাগে প্রায় তিন ঘন্টা।

কোথায় থাকবেন
সোনার চরে থাকার মত আরামদায়ক কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে চর মন্তাজে রয়েছে বন বিভাগ, স্যাপ বাংলাদেশ ও মহিলা উন্নয়ন সমিতির ব্যবস্থাপনায় মোটামুটি সুবিধা সম্পন্ন বাংলো। কিছু হোটেলও আছে। তবে আগে থেকে বুকিং দিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়াও রয়েছে বন বিভাগের ক্যাম্প। যদি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেতে চান তবে চরেই তাঁবু খাটিয়ে ক্যাম্পিং করতে পারেন।

সৈকত
সোনার চরে সমুদ্র সৈকত। ছবি : লেখক

পরামর্শ ও সতর্কতা 

  • যেহেতু সমুদ্রের কোল ঘেঁষে এই চরের অবস্থান তাই সোনার চরে যেতে আপনাকে অবশই লঞ্চ, স্পিডবোট বা ট্রলারে করে যেতে হবে। নদী বা সমুদ্র অনেক সময়ই উত্তাল থাকে বিশেষ করে বর্ষকালে। তাই সোনার চর ভ্রমণ শীতকালেই বেশি নিরাপদ।
  • যেহেতু চর এলাকা তাই গাড়ির কোনো ব্যবস্থা নেই। যাদের হাটার অভ্যাস কম তাদের না যাওয়াই ভালো।
  • বনের মধ্যে ক্যাম্প করা থেকে বিরত থাকুন। বনের বেশি গহিনে যাবেন না, আর গেলেও সঙ্গে অন্তত দুজনকে রাখুন।
  • শিয়ালের উৎপাত বেশ ভালই। তাই চরে রাতে তাঁবু করলে নিরাপদ দূরত্বে অবশ্যই ক্যাম্প ফায়ার করবেন।
  • সরীসৃপ প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে ক্যাম্প গ্রাউন্ডের চারপাশে কার্বলিক এসিড ছিটিয়ে দিন।
  • এই অঞ্চলে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই অবশ্যই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন। আর নিকটবর্তী বাজারে সোলার পাবেন। সেখানেও মোবাইলফোন চার্জ করতে পারেন; যা অনেক সময়সাপেক্ষ।
জেলে
স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে আড্ডা দিলে সময় মন্দ কাটবে না। ছবি : লেখক
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

এই শীতে ভ্রমণ হোক সোনার চরে

আপডেট সময় ০৭:১০:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩
বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সোনার চর। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দক্ষিণ সীমানার এ দ্বীপটিতে রয়েছে বিস্তৃত সবুজ বনভূমি, প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত। আছে লাল কাঁকড়া ও বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি। নগরের কর্মচাঞ্চল্ল থেকে বহুদূরে এই সৈকতের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য এখনো অনেকের কাছে অজানা।
সুন্দরবনের মতই জোয়ার ভাটার খেলা চলে সোনার চরে। এখানে সৈকতের বালু খুবই স্বচ্ছ। রোদের আলোয় তা ঝিকঝিক করে বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে সোনার চর। চরের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এততাই নির্মল এবং সবুজ যে সুন্দরবনের থেকেও সুন্দর না বলে উপায় নেই।
বিশ হাজার হেক্টর সবুজে ঘেরা এই সংরক্ষিত বনে আছে বন্য মহিষ, হরিণ, শুকর, বানর এবং পাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এখানকার বিশাল বনভুমির মধ্যে ছড়িয়ে আছে দেড় শতাধিক ছোটবড় খাল। ছোট নৌকা বা ইঞ্জিন চালিত ট্রলার নিয়ে এসব খালে ভেসে ভেসে উপভোগ করতে পারবেন বিচিত্র সব পশুপাখির বিচরণ। বনাঞ্চলের কাছাকাছি গেলে হয়তো সহজেই চোখে পড়বে বুনো মহিষ।
ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা হয়ে যেতে পারে হরিণের পালের সঙ্গে।
মহিষ
বনাঞ্চলের কাছাকাছি গেলে চোখে পড়বে বুনো মহিষ। ছবি : লেখক

সোনার চরের মূল সৌন্দর্য এখানকার ঝাউবন। এ ছাড়া, সৈকতের যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পারবেন। শীতে যদি সোনার চরে বেড়াতে যান তবে হাজারো পাখির বিচরণ ও কলরবে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।

চরটিতে ক্যাম্পিংও করা যায়; তবে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। সোনার চর ভ্রমণ সেন্ট মার্টিনের মতই রোমাঞ্চকর ও আনন্দময়। পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে লঞ্চে করে চর কাজল, রাঙ্গাবালী এবং চর মন্তাজ হয়ে সোনার চর যাওয়ার পুরোটা পথই অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর। যাত্রাপথে চোখে পড়বে সবুজ ম্যানগ্রোভ বনভূমি, বিশাল মহিষের পাল, স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য এবং চর অঞ্চলের মানুষের কর্ম চঞ্চলতা।

ঘাট
ঘাটে নৌযানের অপেক্ষায় স্থানীয়রা। ছবি : লেখক 

২০১১ সালে সোনার চর পশুপাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বনের মধ্যে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে গেছে পাকা রাস্তা। মূলত পর্যটকদের ভ্রমণের সুবিধার জন্য এটি করা হয়েছে। বন বিভাগের উদ্যোগে বাঘ এবং হরিণের অভয়াশ্রম করা হয়েছে সোনার চরে। এ ছাড়া একটা কুমির প্রজনন কেন্দ্রও গড়ে উঠছে।

কীভাবে যাবেন  
সদরঘাট থেকে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর লঞ্চে উঠে চরকাজল এ নামার পর ছোট লঞ্চে চর মন্তাজ যেতে হবে। এরপর ট্রলার ঠিক করে সোনার চর যাবেন। এ ছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি গলাচিপার লঞ্চে উঠে গলাচিপা চলে যান। গলাচিপা লঞ্চঘাট থেকে স্পিডবোটে সোনার চরে যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘন্টা। গলাচিপা থেকে সোনার চরে রিজার্ভ ট্রলারে একদিনে যাওয়া-আসার খরচ ২ হাজার ৫০০-৩০০০ টাকা।

লঞ্চ
বনাঞ্চলের ভেতরের খালে নৌকায় ভ্রমণ। ছবি : লেখক

গলাচিপা থেকে চর মন্তাজ পর্যন্ত প্রতিদিন লঞ্চ যাতায়াত করে। সকাল ১০টা এবং বেলা ২টায় ছেড়ে যায়। আবার কুয়াকাটা থেকেও সোনার চরে যাওয়া যেতে পারে। যেতে হবে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে। ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে সময় লাগে প্রায় তিন ঘন্টা।

কোথায় থাকবেন
সোনার চরে থাকার মত আরামদায়ক কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে চর মন্তাজে রয়েছে বন বিভাগ, স্যাপ বাংলাদেশ ও মহিলা উন্নয়ন সমিতির ব্যবস্থাপনায় মোটামুটি সুবিধা সম্পন্ন বাংলো। কিছু হোটেলও আছে। তবে আগে থেকে বুকিং দিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়াও রয়েছে বন বিভাগের ক্যাম্প। যদি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেতে চান তবে চরেই তাঁবু খাটিয়ে ক্যাম্পিং করতে পারেন।

সৈকত
সোনার চরে সমুদ্র সৈকত। ছবি : লেখক

পরামর্শ ও সতর্কতা 

  • যেহেতু সমুদ্রের কোল ঘেঁষে এই চরের অবস্থান তাই সোনার চরে যেতে আপনাকে অবশই লঞ্চ, স্পিডবোট বা ট্রলারে করে যেতে হবে। নদী বা সমুদ্র অনেক সময়ই উত্তাল থাকে বিশেষ করে বর্ষকালে। তাই সোনার চর ভ্রমণ শীতকালেই বেশি নিরাপদ।
  • যেহেতু চর এলাকা তাই গাড়ির কোনো ব্যবস্থা নেই। যাদের হাটার অভ্যাস কম তাদের না যাওয়াই ভালো।
  • বনের মধ্যে ক্যাম্প করা থেকে বিরত থাকুন। বনের বেশি গহিনে যাবেন না, আর গেলেও সঙ্গে অন্তত দুজনকে রাখুন।
  • শিয়ালের উৎপাত বেশ ভালই। তাই চরে রাতে তাঁবু করলে নিরাপদ দূরত্বে অবশ্যই ক্যাম্প ফায়ার করবেন।
  • সরীসৃপ প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে ক্যাম্প গ্রাউন্ডের চারপাশে কার্বলিক এসিড ছিটিয়ে দিন।
  • এই অঞ্চলে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই অবশ্যই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন। আর নিকটবর্তী বাজারে সোলার পাবেন। সেখানেও মোবাইলফোন চার্জ করতে পারেন; যা অনেক সময়সাপেক্ষ।
জেলে
স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে আড্ডা দিলে সময় মন্দ কাটবে না। ছবি : লেখক

Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/youthbangla24/public_html/wp-includes/functions.php on line 5420