কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম-বাংলার অনেক খেলাধুলা। লাঠিখেলা তেমনি একটি ঐতিহ্য। বাংলার এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নওগাঁয় অনুষ্ঠিত হলো লাঠিখেলা।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের চকবনমালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ খেলার আয়োজন করা হয়। ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের যুবসমাজ এ খেলার আয়োজন করে।
লাঠিখেলার আয়োজন ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে বিরাজ করছিল উৎসবের আমেজ। দীর্ঘদিন পর বিলুপ্তপ্রায় লাঠিখেলা দেখে উচ্ছ্বসিত হন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিন দেখা যায়, লাঠিখেলা দেখতে চকবনমালী স্কুলমাঠে জড়ো হয়েছেন আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন। স্থানীয় কয়েকজন লাঠিয়ালও হাজির হয়েছেন। ঢোল আর কাঁসার ঘণ্টার শব্দে সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
ঢোলের তালে তালে লাঠিয়ালরা প্রথমে শারীরিক কসরত ও অঙ্গভঙ্গি দেখান। বেশ কিছুক্ষণ চলে এ কসরত। এরপরই শুরু হয় মূল আকর্ষণ। দুজন লাঠিয়াল শব্দের তালেতালে ঝাঁপিয়ে পড়েন একে অন্যের ওপর। এসময় প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চলে অদম্য চেষ্টা। এমন দৃশ্য দেখে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসী ও দূর থেকে আসা দর্শনার্থীরা।
লাঠিখেলা দেখতে আসা ষাটোর্ধ্ব মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আগে প্রতিটি গ্রামে মহররম মাসে লাঠিখেলা হতো। এখনতো প্রায় বিলুপ্তির পথে। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এমন আয়োজন দেখে ভালো লাগছে।’
আরেক দর্শক হেলাল আহমেদ বলেন, ‘অনেকদিন পর লাঠিখেলা দেখলাম। খুব উপভোগ করেছি। গ্রামে গ্রামে এমন আয়োজন করলে আমাদের ঐতিহ্য টিকে থাকবে।’
লাঠিয়াল আমজাদ হোসেন বলেন, ‘দুই যুগের বেশি সময় ধরে লাঠি খেলি। আগে গ্রামে গ্রামে গিয়ে খেলতাম। অনেক জমজমাট আয়োজন হতো। আমরাও যেমন আনন্দ পেতাম, গ্রামের মানুষও আনন্দ পেত। এখন আর এ খেলার তেমন আয়োজন হয় না। মাঝে মধ্যে কোথাও দাওয়াত পেলে লাঠি খেলতে যাই। খুব ভালো লাগে।’
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম রেজাউল করিম পল্টন বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। এসব খেলা আবারও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এমন আয়োজন।